ঢাকা, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪
সর্বশেষ:

টেলি সামাদের জানা-অজানা কিছু তথ্য 

শোবিজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:০৫, ৭ এপ্রিল ২০১৯  

দর্শকদের মুখে হাসি ফুটিয়ে চলা মানুষটি চলে গেলেন এই হাসি-কান্নার পৃথিবী ছেড়ে। (ফাইল ছবি)

দর্শকদের মুখে হাসি ফুটিয়ে চলা মানুষটি চলে গেলেন এই হাসি-কান্নার পৃথিবী ছেড়ে। (ফাইল ছবি)

‘কাউকে কাঁদানোর চাইতে হাসানো অনেক বেশি কঠিন’।  

নিজের সৃজনশীলতা দিয়ে যারাই মানুষকে হাসাতে চেয়েছেন, তারা সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করবেন এই কথা। বাংলা চলচ্চিত্রে এই কঠিন কাজটিই দীর্ঘদিন ধরে করেছেন টেলি সামাদ। 

মাথায় ঝাঁকড়া চুলওয়ালা ছিপছিপে গড়নের এই মানুষটি পর্দায় এসে দর্শকদের হাসিয়েছেন প্রায় চার দশক ধরে। সত্তরের দশকে সিনেমায় পদার্পণ করে একটি দুটি করে প্রায় ৬০০’র মত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন নানা গুণে গুণান্বিত এই শিল্পী।

দর্শকদের মুখে হাসি ফুটিয়ে চলা মানুষটি ৬ এপ্রিল চলে গেলেন এই হাসি-কান্নার পৃথিবী ছেড়ে। এই গুণী শিল্পীর জীবনের কিছু জানা-অজানা দিক থাকছে পাঠকদের জন্য।

> ১৯৪৫ সালের ৮ জানুয়ারি ঢাকা জেলার বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণ করেন টেলি সামাদ। পিতৃপ্রদত্ত নাম কিন্তু টেলি সামাদ ছিল না। জন্মের পর তার নাম ছিল আবদুস সামাদ।  

> সিনেমার পর্দার মতোই ছেলেবেলায় ছিলেন দুরন্ত দুষ্টু। বাবা এবং বড় ভাইয়ের কড়া শাসনে থেকেও দুষ্টুমির কোন শেষ ছিল না। স্কুল পালিয়ে ঘুরে বেড়াতেন দশ গ্রাম। একদিন বাবার কাছে ধরা খেয়ে দৌড়ে চলে গেলেন মামাবাড়ি। সেখানেই ছুটির আমেজে থাকা শুরু করলেন। সবাই যখন জিজ্ঞেস করতে লাগল, স্কুল নেই নাকি? তখন কিশোর আবদুস সামাদ জানালেন যে, সাইক্লোনে  স্কুলঘর উড়ে গেছে। বিস্মিত আত্মীয়রা জিজ্ঞেস করলেন, কই তাদের গ্রামে তো কোন ঝড় হয়নি। দুষ্টু কিশোর জানাল, শুধু তাদের গ্রামেই ঝড় বয়ে গেছে। সেখানে ১৫ দিন থেকে বাড়ির লোকেদের খোঁজ পেয়ে আবার দৌড়ে চলে গেলেন আরেক গ্রামে ফুপুর বাড়ি। সেখানেও সবার জিজ্ঞাসা, স্কুল নেই? আবদুস সামাদ জানালেন, হেডমাস্টার মারা গেছেন। এসব বলেও শেষ রক্ষা হয়নি। ওই গ্রামের ছেলেপিলেদের সাথে এক টানে সিগারেট খাওয়ার প্রতিযোগিতারত অবস্থায় ধরা পড়ে গেলেন বড় ভাইয়ের। বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে কান কিছুটা বড় হয়ে গেল।

> ছোটবেলায় হতে চাইতেন ‘ত্রিকোণ শিল্পী’। গান, অভিনয় আর ছবি আঁকা দিয়ে মাত করে দিবেন সবাইকে এমন স্বপ্ন দেখতেন ছেলেবেলাতেই।

> বড় ভাই আবদুল হাই গান ভালোবাসতেন। বিখ্যাত নজরুল সংগীত শিল্পী সুধীন দাশের কাছে গান শিখতেন তিনি। কিন্তু টেলি সামাদ শিল্পী হতে চাইলেও, কখনো গান শিখেননি। নিজের মতো করেই হারমোনিয়াম নিয়ে বসে গান গাইতে থাকতেন। এভাবেই হয়ে ওঠেন গায়ক।

> বড় ভাই ছিলেন চারুকলার (তৎকালীন আর্ট কলেজ) শিক্ষার্থী। টেলি সামাদেরও চিত্রকলা পছন্দের বিষয় ছিল। বাবা চেয়েছিলেন ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়ে পড়ালেখা করাবেন। কিন্তু ছেলে চেয়েছিল আর্ট নিয়ে পড়তে বড় ভাইয়ের মতো করেই। বাবা জানিয়ে দিলেন, আর্ট কলেজে পড়লে তাকে কোন টাকা পয়সা দিবেন না। টেলি সামাদ বলতে গেলে বিদ্রোহ করেই কষ্ট সৃষ্টে পড়া শেষ করলেন চারুকলায়।

> জল রঙে ছবি আঁকতেন টেলি সামাদ। আঁকাআঁকি কতটা ভালোবাসতেন সেটা বোঝা যায় একটা ঘটনায়। ‘নেপালী মেয়ে’ সিনেমার শুটিংয়ে ছিলেন নেপালে। সেখানে শুটিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে এঁকে ফেলেছিলেন ৪০টির মতো ছবি। তবে এতো এতো ছবি আঁকলেও কখনোই প্রদর্শনী করায় হয়নি তার।   

> বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে ১৯৭৩ সালে ‘কার বউ’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে। এরপর থেকে শেষ ছবি ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জিরো ডিগ্রি’র মাঝে অভিনয় করেছেন প্রায় ৬০০ চলচ্চিত্রে।

ভিডিও দেখুন>>>

> শুধু যে অভিনয় করেছেন এমনটা না। চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকও করেছেন টেলি সামাদ। ৫০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন তিনি।

> শুধু যে গান গেয়েছেন আর কমেডিয়ান হিসেবেই অভিনয় করে গেছেন এমনটাও না। টেলি সামাদ একটি চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনাও করেছিলেন। ১৯৮৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মনা পাগলা’ ছবির সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন তিনি, ছবিটির নায়কও ছিলেন টেলি সামাদ নিজেই। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে এই একটি ছাড়া আর মাত্র দুটি ছবিতে নায়করূপে দেখা গেছে তাকে। সিনেমায় গাওয়া ৭টি গানের সবকটিই সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে গেয়েছিলেন।

> শুধু বড় পর্দাতেই নয়, টেলিভিশনে তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিলেন টেলি সামাদ। বিটিভির সেই আমলের জনপ্রিয় নাটক ‘চাচা-ভাতিজা’য় ভাতিজা চরিত্রে ‘চাচা’ নাজমুল হুদা বাচ্চুর সাথে অভিনয় করে টেলি সামাদ পান তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তা। শুধু যে নাটকটিতে অভিনয় করেছিলেন তাই নয়। নাটকটির সবগুলো পর্ব নাজমুল হুদা বাচ্চুর সাথে মিলে লিখেছিলেনও টেলি সামাদ।

> টেলিভিশনে এই জনপ্রিয়তার রেশ ধরেই বিটিভির তখনকার ক্যামেরাম্যান মোস্তফা মাহমুদ তার নিজের সিনেমায় অভিনয় করার প্রস্তাব দেন আবদুস সামাদকে এবং প্রস্তাব করেন নতুন নাম ‘টেলি’ সামাদ। সেই থেকেই এই এক নামেই পুরো বাংলাদেশ চেনে টেলি সামাদকে।

নিউজওয়ান২৪.কম/আ.রাফি